আপনার জন্যে ৮ রকমের টক ঝাল আচারের রেসিপি
গরম ভাত র যেকোনো পদ হোক না কেন, পাতে একটু ত্বক ঝাল আচার হলে মন্দ হয়না, তাই নয় কি? এছাড়া রড পোয়াতে পোয়াতে বাটি করে একটু আচার পা দুলিয়ে দুলিয়ে শুধু শুধু খেতেও কতই না ভালো লাগে। তাই আজ আপনাদের জন্যে রইলো ৮ রকমের ত্বক ঝাল মিষ্টি আচারের রেসিপি।
১. টক-ঝাল-মিষ্টি আমড়ার আচার

বিভিন্ন রকমের আচারের মধ্যে আমড়ার আচার অন্যতম। আমড়া দিয়ে তৈরি টক-মিষ্টি-ঝাল আচার খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজাদার।
উপকরণ
– আমড়া ২ কেজি
– সরিষার তেল আধা লিটার
– আদা-রসুন বাটা ৬ টেবিল চামচ
– নুন পরিমাণ মতো
– চিনি স্বাদ অনুযায়ী
– কাটা শুকনালঙ্কা ৪ থেকে ৫টি
– আদাকুচি ২ টেবিল চামচ
– পাঁচফোড়ন ২ চা-চামচ
– লঙ্কা গুঁড়ো ২ চা-চামচ
যেভাবে করবেন
আমড়া ধুয়ে খোসা ছিলে ফালি করে কাটুন। এবার চিনি বাদে তেল, আদা-রসুন, মসলা মেখে আমড়া ১ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। চুলায় পাত্রে তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন ভাজতে হবে। তারপর বাকি সব মশলা সামান্য জলদিয়ে ভালো মতন কষিয়ে নিন। জলফুটে উঠলে মাখানো আমড়া দিয়ে কষাতে থাকুন। ভালোমতো কষিয়ে চিনি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। তেল আমড়ার ওপরে উঠলে নামিয়ে আনুন মজার স্বাদের আমড়া আচার। এই আচার পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুরি অথবা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন। চাইলে শুধুও খেতে পারেন। বাষ্প নিরোধী কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করলে আচার অনেকদিন পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব।
২. কাঁচা আমের আচার তৈরির সহজ রেসিপি

টক-ঝাল-মিষ্টি কাঁচা আমের আচার বানানোর এই তো সময়। আর সারা বছরই বাড়িতে রেখে খাওয়া হবে এই আচার। তাই এখন রেসিপি দেখে আচার তৈরি করুন নিজের পছন্দ মত।
উপকরণ
আম ১০টা,
সরিষার বাটা ২ চামচ,
পাঁচফোড়ন বাটা ১ চামচ,
আরো লাগবেঃ
হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
লঙ্কা গুঁড়া ১ চা-চামচ,
নুন স্বাদমতো,
চিনি ১ কাপ,
তেজপাতা ২টা,
শুকনা লঙ্কা ৩টা,
সরিষার তেল ১ কাপ।
প্রণালি
আম খোসাসহ টুকরো করে হলুদ ও নুন মাখিয়ে ৮-১০ ঘণ্টা রোদে দিন। এবার হলুদ, মরিচ, সরষে, পাঁচফোড়ন আমের সঙ্গে মিশিয়ে আবার রোদে দিন। শুকিয়ে এলে বাকি সিরকা, চিনি, তেজপাতা ও শুকনা লঙ্কা দিয়ে বোতলে ঢুকিয়ে রোদে দিন। তেল ভালোভাবে গরম করে ঠান্ডা হলে আচারের বোতলে ঢেলে কয়েক সপ্তাহ রোদে দিন।
৩. তেঁতুল-রসুনের টক-মিষ্টি-ঝাল আচার

রসুন শুধু মসলাই নয়। এ মসলা দিয়ে বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন চমৎকার আচার। বিভিন্ন অসুখ থেকে বাঁচতে যারা কাঁচা রসুন খেতে চাইলেও পারেন না, তাদের জন্য রসুনের আচার চমৎকার সমাধান হতে পারে। তেঁতুল খুবই একটি জনপ্রিয় খাবার যা সবাই পছন্দ করেন বিশেষ করে মেয়েরা বেশি। এই মজাদার খাবারটি যদি আর একটু বেশি মজাদার করে খাওয়া যায় তবে কেমন হয়? দেখে নিন এ দুইয়ের আচার রেসিপি।
উপকরন
পাকা তেঁতুল- ১ কেজি
রসুনের কোয়া- ১০-১২টি রসুনের
চিনি- আড়াইশো গ্রাম (স্বাদমতো)
লবণ- ১ চা চামচ
ভিনেগার- ১/২ কাপ
সরিষার তেল- ১/২ কাপ
শুকনালঙ্কা টালা গুঁড়া- ১/৪ কাপ
ধনে টালা গুঁড়া- ২-৩ টে চামচ
প্রস্তুত প্রনালী
তেঁতুল জলে ভিজিয়ে রাখুন। তেঁতুল নরম হলে তার থেকে আঁশ বের করে নিন ও মেখে একটি পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। একটি গভীর হাঁড়িতে তেঁতুলের পেস্ট, চিনি, লবণ, ভিনেগার মিশিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। চিনির জল শুকিয়ে আসলে সরিষার তেল, লঙ্কা ও ধনে গুঁড়া মিশিয়ে আরো কিছুক্ষণ জ্বাল করুন। তেঁতুল ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে রসুনের কোয়া মিশিয়ে রোদে দিন। আচার যতো বেশী রোদে দেবেন, ততো বেশী মজার হবে। বোতলে ভরার আগে আরো কিছুটা ধনে গুঁড়ো মিশিয়ে নেবেন। খিচুড়ির সাথে পরিবেশন করুন দারুন মজার তেঁতুলের আচার!
৪. জলপাই-রসুনের আচার

যা যা প্রয়োজন
জলপাই– ১ কেজি
সরিষার তেল– ২-৩ কাপ
রসুন কোয়া– ৫-৬টি রসুনের
সরিষা বাটা– ৩ টে চামচ
আদা-রসুন বাটা– ২ টে চামচ করে
হলুদ-লঙ্কা গুঁড়া– ১ চা চামচ করে
চিনি– দুই-আড়াই কাপ
ভিনেগার– ১ কাপ
আস্ত পাঁচফোড়ন– ১ চা চামচ
নুন– ১ চা চামচ
যেভাবে করবেন
জলপাই সেদ্ধ করে জলঝরিয়ে হালকা করে ভেঙে রাখুন। হাঁড়িতে তেল গরম করে আস্ত পাঁচফোড়ন ফোঁড়ন দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা কষিয়ে নিন। অল্প একটু ভিনেগার দিয়ে মসলা ভালোভাবে কষান। মসলা কষানো হলে জলপাই দিয়ে কিছুক্ষন কষিয়ে চিনি, নুন ও ভিনেগার দিয়ে মিশিয়ে নিন। অনবরত নাড়তে থাকুন। চিনির জলকিছুটা শুকিয়ে আসলে রসুন কোয়া মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ এইভাবে নাড়া-চাড়া করে হাঁড়িটি তাওয়ার ওপর বসিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি আঁচে তেল ছেড়ে আসা পর্যন্ত রান্না করুন। ঠান্ডা করে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন। মাঝে মাঝে রোদে দিন, এতে আচার নষ্ট হবেনা।
৫. ভিনেগারে ডুবানো জলপাই

যা যা প্রয়োজন
জলপাই– ১ কেজি
ভিনেগার– ৩০০ মিলি
জল– ৪০০ মিলি
নুন– ২ টে চামচ
শুকনো লঙ্কা– ৪-৫টি
রসুন কোয়া– ৫-৬টি
থ্যাতো করা রসুন– ২ কোয়া
অলিভ অয়েল– যা প্রয়োজন
এছাড়াও লাগবেঃ জল ও নুন
যে ভাবে করবেন
জলপাইয়ের উপর-নীচে দুইদিকে অল্প করে কেটে নিন। একটি বাটিতে জলপাই ডুবে থাকে সেই পরিমাণ জলনিয়ে ২-৩ টে চামচ নুন মিশিয়ে নিন। এই লবণ-পানিতে জলপাই ডুবিয়ে রাখুন সাত দিন। প্রতিদিন একবার করে লবণ-জলবদলিয়ে দিন। এইভাবে সাতদিন রাখার পর দেখবেন জলপাইয়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এবং জলপাই নরম হয়েছে। সাতদিন পর জলপাই ভালোভাবে ধুয়ে জলঝরিয়ে নিন। বড়ো একটি পাত্রে ভিনেগার, নুন ও জল মিশিয়ে নিন। এইবার পরিষ্কার বোতলে প্রথমে জলপাই, রসুন কোয়া, থ্যাতো করা রসুন ও শুকনালঙ্কা ঢুকিয়ে নিন। এইবার জলপাই ডুবে থাকে এইভাবে লবণ-মিশ্রিত ভিনেগারের জলদিন। সবার উপরে অলিভ অয়েল দিয়ে জলঢেকে দিন। শক্ত করে বয়ামের মুখ আটকিয়ে এক মাস রাখুন। এক মাস পর আপনার জলপাই পরিবেশনের জন্যে রেডি হয়ে যাবে। ডাল রান্নায় ইউজ করতে পারেন এই জলপাই কিংবা খিচুড়ির সাথেও পরিবেশন করতে পারেন।
৬. লেবুর আচার তৈরির সহজ রেসিপি

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বাদের আচার এর কথা শুনেছি ও টেস্ট করেছি। কিন্তু কখন কি লেবু আচার এর কথা শুনেছেন? দেখেছেন এটি দেখতে কেমন? বা টেস্ট? যদি সত্যি না টেস্ট করে থাকেন তবে ঝটপট এক পলকে দেখে নিন এর রেসিপি আর ঘরে বেসেই তৈরি করুন মজাদার ও সুস্বাদু লেবুর আচার।
উপকরণ
লেবু ৬টি,
কাঁচা লঙ্কা ৬টি,
নুন আধা কাপ,
মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ,
হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ,
২টি লেবুর রস।
ভাজা বিশেষ মসলার গুঁড়া
১. মেথি ১ চা-চামচ,
২. সরিষা ১ চা-চামচ,
৩. হিং ২-৪ চা-চামচ।
এই মসলাগুলো আলাদা করে ভেজে একত্রে গুঁড়া করে নিতে হবে।
প্রণালি
লেবু ধুয়ে একেকটি লেবুকে ১০-১২ টুকরা করুন। কাঁচা লঙ্কা মাঝখান থেকে চিরে ফালি করে নিন। একটি শুকনা প্যানে লেবু ও কাঁচা লঙ্কা নিয়ে নুন ও চিনি চামচ দিয়ে মিশিয়ে নিন। তারপর হলুদ ও লংকার গুঁড়ো দিয়ে একইভাবে মিশিয়ে নিন। সবশেষে ভাজা বিশেষ মসলার গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় দিয়ে আলতোভাবে মিশিয়ে নাড়ুন। একেবারে মৃদু আঁচে দুই ঘণ্টা অথবা জল না শুকানো পর্যন্ত চুলায় রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে নাড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন নিচে পোড়া না লাগে। মাখা মাখা হলে নামিয়ে কাচের বোতলে ভরে ঠান্ডা করে নিন। এবার বাতাস না ঢোকে এমনভাবে মুখ বন্ধ করে রোদে দিন। সব ধরনের আচার রোদে দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। এই আচারটি গ্যাসে না দিয়ে সরাসরি বোতলে ভরে রোদে দিয়ে ১ মাস পর খাওয়া যাবে। প্রতিদিন রোদে দিলে আচার মজে গেলে খেতে ভালো লাগবে।
৭. কাঁচা লঙ্কার টক-ঝাল-মিষ্টি আচার

উপকরণ
কাঁচা লঙ্কা ১ কেজি
সিরকা/ভিনেগার ১ কাপ
তেতুলের মাড় ১/২ কাপ
রসুনের আস্ত কোয়া ১০ টি
পাঁচ ফোড়ন ১ টেবিল চামচ
সরিষার তেল ২৫০ গ্রাম
চিনি হাফ কাপের একটু বেশি
নুন প্রয়োজন মত
প্রণালী
কাঁচা লঙ্কা গুলো ধুয়ে ঝড়িয়ে পানিতে ভিনেগার দিয়ে ভাপিয়ে নাও। এবার তেল গরম করে পাঁচ ফোড়ন ও রসুন দিয়ে হালকা ভেজে কাঁচালঙ্কা দিয়ে মাঝারি আঁচে ৫/৬ মিনিট রান্না করে তেতুলের মাড় ও চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে টগবগ করে ফুটিয়ে নামিয়ে ফেল। ঠান্ডা করে বোতলে ভরে রাখুন।
টিপস
যদি সম্ভব হয় বোতলের ঢাকনা খুলে আচারটি মাঝে মাঝে রোদে দিও এত করে আচারে সুন্দর একটা সুভাস পাবে এবং আচার ও ভালো থাকবে।
৮. বোম্বাই লঙ্কা তেতুলের আচার

প্রয়োজনীয় উপকরন
বোম্বাই লঙ্কা ১৫ /২০টি
তেতুল ২ কাপ
পেয়াজ কুচি ১ কাপ
রসুন কুচি ১/২ কাপ
আস্ত রসুন কোয়া ১/২ কাপ
পাচফোড়ন ২ চা চামচ
জিরা গুড়া ১ চা চামচ
সরিষা বাটা ২ চা চামচ
শুকনা লঙ্কা ২/৩ টা
হলুদ গুড়া ১ চা চামচ
নুন পরিমান মত
সরিষা তেল ২ কাপ
তেজ পাতা ২ টা
প্রস্তুত প্রনালি
লঙ্কা কেটে টুকরো করে নিন,তেতুলের বীচি ফেলে ২ কাপ পরিমান নিন।প্যানে বা কড়াই এ তেল দিয়ে তাতে পেয়াজ ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজুন। এবার তাতে তেতুল সহ সব মশলা দিয়ে নাড়ুন, লঙ্কা দিন, অল্প আচে সময় নিয়ে রান্না করুন। বাদামি হয়ে আসলে নামিয়ে নিন। বোতলে ভরে সংরখন করুন তেতুলের আচার ।
লেবুর আচারের রেসিপি
হজমে সহায়ক এবং রুচি বাড়ানোর জন্য
জারক লেবু খাওয়া হলেও ধনেপাতা এবং
পুদিনাপাতা সমন্বয়ে জারক লেবু দিয়ে
বানানো চাটনি ও কিন্তু ভীষণ মজাদার
একটি খাবার।
আমি যেভাবে বানিয়ে থাকি সেই রেসিপিটি
আজকে হল।
উপকরনঃ
সতেজ সবুজ লেবু- ১ কেজি
লবণ- ১/২ কাপ
লাল মরিচ গুঁড়া- ২ টেবিল চামচ
কালিজিরা- ১ চা চামচ
ভিনেগার প্রয়োজন মত
ফুটন্ত গরম পানিতে ৫ মিনিট
ডুবিয়ে তুলে শুকিয়ে নেওয়া কাঁচের বয়াম
প্রনালীঃ
– লেবুগুলোকে ধুয়ে পেপার টাওয়েল দিয়ে খুব
ভালো করে মুছে নিন যেন পানি কোথাও
লেগে না থাকে।
– প্রতিটি লেবুকে ছুড়ি বা বঁটির সাহায্যে ৪ ভাগে
চিড়ে নিন অথবা চার টুকরো করে কেটে নিন।
– একটি বাটিতে লবণ, লাল মরিচের গুঁড়া এবং
কালিজিরা একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
– যে বয়ামে লেবুগুলোকে রাখা হবে সেই
বয়ামে এক স্তরে লেবু দিন এবং উপর
থেকে লবণ এর মিশ্রণ দিন।
এভাবে পুরো বয়াম টি ভরে নিতে হবে।
– এবার পুরো বয়ামে সাদা সিরকা বা
ভিনেগার ঢেলে দিন যেন লেবুগুলো
সম্পূর্ণ ডুবে থাকে।
– বয়ামের মুখ ভালোভাবে সিল করে
দিতে হবে।
৭ দিন পর পর রোদে দিলে ভালো
থাকবে।
– ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে খোসা সহ
লেবুর জারক খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ
উপযোগী হয়।

