তৈরি করুন গ্লাস পেইন্টিং

গ্লাস পেইন্টিং করার নতুন সাধ হয়েছে যাদের, কাঁচের গায়ে আঁকিবুকি করার চিন্তা করছেন কিন্তু উপায় জানা নেই, তারা উপায় পাবেন এই লেখায়। পেইন্ট করার মূল ধাপগুলো দেখে নিয়ে তারপর ইচ্ছে মতো গ্লাস পেইন্টিং চলুক। স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসশিট। ... কাগজ লাগতে পারে, যদি নকশাটা প্রথমে কাগজে এঁকে নিয়ে তার উপর কাঁচ বসিয়ে আউটলাইন করেন।

গ্লাস পেইন্টিং নিয়ে অনেকেই অনেক সময় জানতে চান। কিভাবে করবেন, কি দিয়ে করবেন, কিভাবে শুরু করবেন ভেবে পান না। তাছাড়া অনলাইনে অনেকেই এখন বিভিন্ন জার, স্বচ্ছ কাঁচ, বারান্দা অথবা মূল ফটকের কাঁচের দরজা বা বোতলে আর্ট করে বেশ ভালো পরিমান অর্থই উপার্জন করে ফেলতে পারছেন। এই লিখাটিতে চেষ্টা করবো খুব অল্প কথায় পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারনা দেয়ার।
গ্লাস পেইন্টিং আপাত দৃষ্টিতে কঠিন লাগলেও অন্য যেকোনো পেইন্টিং থেকে তুলনামূলক সহজ। তবে এটির জন্য সময় এবং ধৈর্য দুটোই প্রয়োজন।

এখন দেখা যাক কি কি লাগতে পারে পুরো পেইন্টিং টি কমপ্লিট করতে।
১. যেকোনো ধরনের গ্লাস সার্ফেস। ডিপেন্ড করে আপনি কিসে আর্ট করতে চান। সেটি হতে পারে একটি কাঁচের জার, হতে পারে কাঁচের বোতল, হতে পারে কাঁচের শিট, কিংবা হতে পারে একটি আয়না।



২. গ্লাস কালার। বাজারে বিভিন্ন কম্পানির বিভিন্ন দামের সলভেন্ট বেইজড গ্লাস কালার পাওয়া যায়। Camel, Favicryl এগুলো খুব জনপ্রিয় এবং মোটামুটি সব জায়গায় পাওয়া যায়। দাম জায়গা ভেদে ২০০-২৯০ টাকা হয় ১২ পিস সেট। চেষ্টা করবেন সবচেয়ে ভালো মানেরটা নেয়ার। কারন রঙ এর মান খারাপ হলে আপনার পুরো সময় এবং কষ্ট সবই বৃথা যেতে পারে। আর বাজারে নকলও পাওয়া যায়। ট্রাস্টেড দোকান থেকে অরিজিনালটা কিনবেন।


৩. তুলি লাগতে পারে। আপনি কি ধরনের আর্ট করবেন তার সাথে মিলিয়ে একটা তুলি সিলেক্ট করে নিবেন।


৪. কাগজ লাগবে। যেই আর্টটি আপনি গ্লাসে করবেন সেটি চেষ্টা করবেন কাগজে আগে এঁকে নিতে।

৫. আউটলাইন করার জন্য আলাদা একটি রঙ, সাইনপেন, মার্কার বা মাস্কিং টেইপ। কোনটা লাগবে তা নির্ভর করবে আপনি কোন পদ্ধতি অনুসরন করবেন তার ওপর।

এই কয়টি উপকরনই যথেষ্ট একটি সুন্দর গ্লাস আর্ট করার জন্য।
প্রথমে যে মাধ্যমে বা সার্ফেসে আপনি পেইন্টিংটা করবেন সেটা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিবেন। তারপর আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে পেইন্টিংটা কিভাবে করবেন।
সাধারনত তিনভাবে করা যায়,


১. স্বচ্ছ কাঁচের ক্ষেত্রে নিচে কাগজ রেখে ছাপ দিয়ে করা যায়।


২. মার্কার বা একটি নির্দিষ্ট রঙ দিয়ে আউটলাইন তৈরি করে করা যায়।


৩. মাস্কিং ট্যাপ ব্যবহার করে ডিজাইন তৈরি করে করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি শুধু যে জায়গাটুকুতে রঙ করবেন সেই জায়গাটুকু রেখে বাকি পুরো জায়গা মাস্কিং টেপ দিয়ে দিবেন। ফলে গ্লাসের অন্য জায়গায় রঙ লাগার কোন সম্ভাবনা থাকে না। আউটলাইন গুলোও খুব স্মুথ হয়।


যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আউটলাইন করে ফেলার পর এটিকে শুকোতে দিন। যদি গ্লাস কালার দিয়েই আউটলাইন করেন তাহলে সাধারনত ২-৩ ঘন্টা লাগে। আর যদি মার্কার বা সাইন পেন ব্যবহার করেন তাহলে কোন সময় লাগবে না। সাথে সাথেই কাজ করতে পারবেন।
এবার নিজের ইচ্ছে মত রঙ করুন। এই ব্যাপারটি শিল্পীর পুরো নিজের স্বাধীনতা। শিল্পী নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে একটি শিল্প তৈরি করবেন।
কাজটি করার মাঝেই একটা বিষয় লক্ষনীয়, যদি কোন বুদবুদ থেকে যায় সাথে সাথে কোন নজল বা শলাকা ব্যবহার করে ফুটিয়ে দিতে হবে। নতুবা এটি পরে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরো কাজ শেষে এটিকে পুরো দিন শুকোতে দিতে হবে এবং কোন ভাবেই স্পর্শ করা যাবে না। শুকিয়ে গেলে দেখুন কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা। থাকলে সেটি শুধরে আবারো শুকোতে দিন।

গ্লাস পেইন্টিং নিয়ে আলোচনা শেষ করার আগে হালকা করে বিভিন্ন ধরনের কাঁচ সম্পর্কে একটু ধারনা দিয়ে দেয়া যাক, বাজারে অনেক রকম গ্লাস দেখা যায় যেমন, মার্কারিং গ্লাস, টেম্পার গ্লাস, চিনি দানা গ্লাস, ক্রিস্টাল গ্লাস, কফি কালার গ্লাস। মার্কারিং গ্লাসের বিশেষত্ব হচ্ছে এটা বাইরে থেকে দেখা যায় না কিন্তু ভেতর থেকে বাইরের জিনিস দেখা যায়। এই গ্লাসের রং সবুজ। টেম্পার গ্লাস মার্কারিং গ্লাসের চেয়ে বেশ মজবুত। এটাতে সব রঙের নকশাই করা যাবে চাইলে। ছোটখাটো কোনো আঘাতে ভাঙ্গে যাবে না। চিনি-দানা গ্লাস সাধারণত কিচেন কেবিনেটের জন্য ব্যবহার করা হয়। চিনি-দানা গ্লাসে অন্য রং বসে না। এই সাদা রঙের গ্লাসের ভেতরেই ছোট দানা দানা কারুকাজ করা থাকে। ক্রিস্টাল গ্লাস অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আপনি যে ধরনের কাঁচে রঙ করবেন সে অনুসারে আপনার উপকরন গুলো সিলেক্ট করে নিতে হবে।
আশা করি, গ্লাস পেইন্টিং এর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা দিতে পেরেছি। 


কিন্তু আজ আমি বলছি গ্লাস পেইন্টিং এর কথা। অবসরের সময় গুলো কাজে লাগিয়ে গ্লাস পেইন্টিং করলে একদিকে যেমন মনের খোরাকের যোগান হয় তেমনি ঘর সাজানোর উপকরনও হলো। 

গ্লাস পেইন্টিং ব্যাপারটি খুবই আকর্ষনীয় এবং সহজ। তবে এটি করার জন্য ধৈর্য প্রয়োজন। 

যাহোক, প্রথমেই আসি কি কি লাগবে।  গ্লাস পেইন্টিং এর জন্য লাগবে স্বচ্ছ কাঁচ অথবা আয়না যেখানে আপনি রং করবেন, রং ও আউটলাইনার। রং ও আউটলাইনার এর জন্য আপনার আশেপাশের দোকানে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া মৌচাক মার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডের দোকান গুলোতেও পাওয়া যাবে। 

আপনার ডিজাইনটি যদি আয়নার উপর করতে চান সেক্ষেত্রে একটি সাইনপেন দিয়ে আয়নার উপর ডিজাইনটি এঁকে নিলে ভালো হয়। আর স্বচ্ছ কাচ হলে কাগজে ডিজাইনটি একে কাচের নিচে স্বচটেপ দিয়ে লাগিয়ে নিন।

প্রথমে আউটলাইনার দিয়ে নকশাটি আকতে হবে। গ্লাস পেইন্টিং এ আউটলাইনারের ব্যবহারটা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা  গ্লাস পেইন্টিং এ ব্যবহার্য রংগুলো ঘন ও তরল। আউটলাইনার ব্যবহার না করলে রঙ ছড়িয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কিছু কাজ আউটলাইনার ছাড়াও করা সম্ভব এবং কাজ করতে গিয়ে আপনি নিজেই সেটা আইডিয়া করতে পারবেন। 

আউটলাইনার দিয়ে বর্ডার লাইন আকার পর নকশাটি আপনার পছন্দের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নিন। 

শেষ হইয়াও শেষ হইতে চায় না। তাই কিছু বাড়তি পরামর্শ!
  • রং করার সময় যাতে বুদবুদ নাহয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
  • বুদবুদ হলে তা পিন দিয়ে ফুটিয়ে ফেলতে হবে। তবে এটাতে অনেক সময় কাজ হয়না। শলার কাঠি ব্যবহার করলে খুব ভালো হয়, কিন্তু সময় বেশী লাগে। 
  • রং না শুকানো পযন্ত স্পর্শ করা যাবে না। তাহলে হাতের ছাপ পড়ে যাবে। আর রংটা যদি আরও একটু গাড় করতে চান, তাহলে শুকানোর পর আবার রং দিতে পারেন।

এভাবে ঘরে বসেই আপনার শোকেসের জন্য তৈরী করে ফেলুন পছন্দসই কোন শোপিস অথবা প্রিয়জনকে উপহার দিন।