স্টিল লাইফ পেইন্টিং
যা কিছু দেখা যায় তা আঁকাও যায়, এটা সম্পূর্ণ মনন ও চিন্তনের বিষয়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ তার নিজের মনের মতো করে ছবির ভাষায় বলতে পারে। আমরাও পারবো, আমাদের সবার দ্বারাই সম্ভব, শুধু প্রয়োজন নিজেকে একটু জাগিয়ে তোলা। চিত্র শিল্প বা আঁকাঝোকার একটি অন্যতম সহজ ও আকর্ষণীয় পদ্ধতি হচ্ছে স্টিল লাইফ পেইন্টিং যাকে বলে জীবন্ত অঙ্কন।
স্টিল লাইফ পেইন্টিং কি?
স্টিল লাইফ পেইন্টিং মূলত প্রাচীন রোমান ও গ্রিক থেকে এসেছে। সতেরো শতাব্দীর আগে এটি মূলত ধর্ম বিষয়ক প্রতীকীর ক্ষেত্রে তৈরি করা হতো। কিন্তু পরে হল্যান্ডের মতো কিছু প্রতিবাদী দেশে স্টিল লাইফ চিত্রকর্মের মূল্য বেড়ে যায়। ১৮ শতাব্দীর পরে সর্বস্তরে এটি প্রধান শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকৃত পায়।
লাইফ পেইন্টিং সাধারণত ফল, ফুল, পাখি, নদী, গাছ এবং আমাদের গৃহস্থালী সামগ্রীর প্রাণহীন প্রতিছবি। এটি আমরা আমাদের টেবলি বা সেল্ফে সাজিয়ে রাখতে পারি। একজন চিত্রশিল্পী বিভিন্ন কারণে জীবন্ত ছবি অঙ্কন করে থাকেন। সেগুলো হলো:
• ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ও তা সবার মাঝ ফুটিয়ে তোলা
• একটি সুপ্ত ধারণা বা লেখা প্রকাশ করা
• কোনো অস্থায়ী বস্তুর (ফুল, ফল) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ধারণ করা
• একটি সাক্ষাৎ উপাদানকে অশরীরী কাঠামোতে নিয়ন্ত্রণ করা
আগে জীবন্ত অঙ্কনকে একটি ক্ষুদ্রমাপের চিত্রশিল্প বলে মনে করা হতো। কিন্তু কিছু চিত্রশিল্পীর বাস্তবসম্মত লাইফ পেইন্টিং মানুষের সেই চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে। তারা তাদের সৃজনশীলতা দ্বারা সমাজের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে।
জীবন্ত অঙ্কন দ্বারা আমরা ছবি আঁকার বেশকিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদ্ধতি হলো:
• ছবি আঁকার মৌলিক কৌশল শেখা যাবে
• কাঠপেন্সিল, চক এবং মোমের রঙের ব্যবহার সম্পর্কে জানা যাবে
• রঙ নিয়ে খেলার সহজ পদ্ধতি জানা যাবে।
এছাড়া লাইফ পেইন্টিং সেই সব শিল্পীদের কাজের একটি মাধ্যম তৈরি করে দিয়েছে যারা তাদের নিজস্ব বিশ্বকে সবার মাঝে জাহির করতে চান।
চিত্রাঙ্কন শেখার ক্ষেত্রে লাইফ পেইন্টিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এর মাধ্যমে ছবি আঁকার প্রাথমিক নিয়ম জানা যায়। এটি দ্বারা আমরা জানতে পারি কিভাবে একটি বস্তুকে একজন চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে হবে। অর্থাৎ এটি আমাদের একটি চিত্রাঙ্কনের সীমারেখা, আকৃতি, অনুপাত, রঙ, এবং রঙের মিশ্রণ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
জীবন্ত ছবি আঁকার উপকরণ:
লাইফ পেইন্টিংয়ের জন্য আমাদের যে সকল জিনিস দরকার হয় সেগুলো হলো:
• টু-বি পেন্সিল
• রাবার
• এ-থ্রি সাইজের কাগজ বা কার্তুজ কাগজ
স্টিল লাইফ পেইন্টিংয়ের নিয়মাবলী
আমরা এখানে দুইটি পদ্ধতিতে লাইফ পেইন্টিংয়ের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। পদ্ধতি দুইটি হলো:
প্রথম ধাপ:
প্রতিটি স্টিল লাইফের ক্ষেত্রে এমনভাবে ছবি আঁকতে হবে যাতে দেখে মনে হয় বস্তুগুলো একটি স্বচ্ছ তারের উপর অবস্থান করছে। এ পদ্ধতিতে চিত্রাঙ্কনের সুবিধা হলো যে প্রতিটি গঠনের আকারও অবস্থানের ব্যাপার সচতেন থাকা যাবে। পরবর্তীতে ছবির নকশা বা গঠনে যেকোনো ধরনের পরবির্তনে সহজে মুছে ফেলার জন্য প্রতিটি নকশা হালকা করে আঁকা জরুরি।
দ্বিতীয় ধাপ:
স্টিল লাইফ অঙ্কনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে যা ছবির গঠনকে আরো কৌতুহলী করে তুলবে। ছবি আঁকার সময় এর মাত্রা, রেখা, আকার এবং রঙের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
নিচের ছবিটিতে আমরা দেখতে পারছি যে ছবিটি একটি স্বচ্ছ তারের উপর নির্ভর করছে। যার ফলে ছবি আঁকার সময় একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করছে।
তৃতীয় ধাপ:
স্টিল লাইফ ছবিটি আঁকার পর এর আকার, আয়তন এবং গঠন নিয়ে যদি আমরা সন্তুষ্ট থাকি তাহলে কাগজে নির্মিত স্বচ্ছ রেখাগুলো মুছে ফেলতে হবে। এরপর আমরা একটি সুষ্পষ্ট ও সঠিক আকার দেখতে পারবো। তখন দেখবো যে প্রতিটি বস্তু তার সঠিক জায়গায় রয়েছে।
এখান আমরা নিচের ছবিটি যদি আগরে ছবির সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখবো যে উপরের ছবিটি অনেক বেশি অষ্পষ্ট। ছবিগুলো দেখতেও অনেক অপরচ্ছিন্ন লাগছে। কিন্তু নিচের ছবিটি অনেক বেশি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ।
চতুর্থ ধাপ:
এখন ছবির প্রতিটি আকারে হালকা করে স্কেচ করতে হবে। পেন্সিল দিয়ে ছবিগুলোর ভেতরে হালকা করে দাগ দিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ:
উপরে চারটি ধাপে আমরা শিখেছি যে কিভাবে ছবির আকার ও গঠন আঁকতে হয়। এখন ৫-৮ নম্বর ধাপে আমরা স্কেচিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরভাবে ছবির আকৃতিটি ফুটিয়ে তুলবো।
ষষ্ঠ ধাপ:
এই ধাপে এসে আমরা প্রতিটি ছবির মাঝে যে দূরত্ব রয়েছে তার উপর জোর দেবো। যাতে চিত্রাঙ্কনটি দেখে বোঝা যায় যে এর ভেতর অনেকগুলো বস্তুর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
অর্থাৎ যতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে আমরা উপরের অংশগুলো শেষ করেছি ঠিক ততটুকু গুরুত্বের সঙ্গে ছবিতে স্কেচ করবো।
সপ্তম ধাপ:
এই স্টেপে এসে আমরা ছবির পেছনের অংশে জোর দেবো। এখানে ছবির বৈষ্যমের উপর জোর দেবো। যেমন কোথাও হালকা প্রতিছবি হবে আবার কোথাও গাড়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। এতে ছবিটি অনেক বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে। অর্থাৎ এই ধাপে এসে একটি জিনিসের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে স্কেচিংয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্যটা ঠিক থাকে।
অষ্টম ধাপ:
সবশেষ আবারো ছবির বস্তুগুলোর মাঝে যে দূরত্ব তার বৈষম্যের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে এর মাঝে আলো ছায়ার একটি খেলা বোঝা যায়। অর্থাৎ ছবির মধ্যে যে দূরত্বগুলো রয়েছে সেগুলো হালকা করতে হবে। আর প্রতিটি বস্তুর পেছনের অংশটুকু গাড় করতে হবে যেনো মনে হয় যে সেগুলো বস্তুর ছায়া।