ডিজিটাল পেইন্টিং ও তৈরির প্রক্রিয়া

 

ডিজিটাল পেইন্টিং ও তৈরির প্রক্রিয়া


20

অনেকদিন পর এভাবে আঁকার সাহস সঞ্চয় করলাম। আঁকার জন্য একটা ছবি মাথায় ঘুরছিলো। একদমই সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এই লেখায় ধাপে ধাপে আঁকার বর্ণনাসহ টুলস, আঁকার ব্রাশ কম্পোজিশন, রঙ, আলোর দিক, টিপস এবং কী-বোর্ড শর্টকাটের বর্ণনা দিয়ে সাজাতে চেষ্টা করছি।
আঁকাটি ডিজিটাল মাধ্যমে তৈরি করতে ব্যবহার করেছি-
Photoshop cs3
Wacom Intuos3 (graphics tablet)

আঁকার কৌশল
(Ctrl+N) দিয়ে প্রথমে A4 সাইজের ৩০০ রেজ্যুলুশনের একটি নতুন ডকুমেন্ট তৈরি করলাম । (ছবি১)
1
ছবি ১

স্কেচ তৈরির আগে ব্রাশ অপশনে গিয়ে (F5) দিয়ে ব্রাশ মেনু ওপেন করলাম (ছবি ২)। ব্রাশ মেনুতে যেকোনো একটি হার্ড ব্রাশ নিয়ে ‘Shape Dynamics’ অপশনটি চালু করে এর সেটিংসে ‘Pen Pressure’ অপশনটি সিলেক্ট করি (এটি শুধু মাত্র গ্রাফিক্স পেন ট্যাবলেটের জন্য প্রেশার সিন্সেটিভ অপশন)। এই অপশনটির কাজ হলো চাপের উপর নির্ভর করে দাগ সরু ও মোটা করা (ছবি ৩)। টুলবার থেকে ব্রাশের ‘Opacity’ ১০০ থেকে ৬০ করি। কারণ ‘Opacity’’ কমানো মানে রঙ পাতলা হয়ে পড়বে এবং একটা দাগের উপর যতবার দাগ দেয়া হবে তা তত গাঢ় হবে (ছবি ৪)। এই পদ্ধতিতে সহজে Light, Mid ও Dark Tone’ আঁকতে পারি । এখন রেফেরেন্স ছবিটিকে ওপেন করে ব্রাশ মেনুতে ও নতুন ডকুমেন্টটির পাশে রেখে এর একটি স্কেচ তৈরি করলাম (ছবি ৫)।
2
ছবি ২
3
ছবি ৩

ছবি ৪
5
ছবি ৫

নতুন একটি লেয়ার খুলি (Ctrl+Shift+N), লেয়ারটির নাম দেই ‘স্কেচ’। ছবিটি স্কেচ করার সময় সূর্যের আলো কোন দিক থেকে এসেছে ‘খুউপ খিয়াল কইরা’ আঁকি। ‘Opacity’ কমানোতে একটি দাগের উপর আরেকটি দাগ দিয়ে সহজে ডার্ক টোন আঁকতে পারি।
পেইন্টিং-এর শুরুতে লেয়ার তৈরি করে তা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে রাখলে কাজের সুবিধা হয় (ছবি ৬)। চুলের জন্য একটি গ্রুপ, স্কিনের জন্য, কাপরের জন্য, ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য একটি গ্রুপ। আমি সিঁড়ি দিয়ে আঁকা শুরু করবো তাই লেয়ারটি নতুন একটি গ্রুপে খুলে গ্রুপের নাম দিলাম ’stair’ । ‘খুউপ খিয়াল কইরা’ ধাপে ধাপে লেয়ার খুলতে হবে। মাথায় রাখতে হবে একটা লেয়ার আরেকটা লেয়ার কে ওভারল্যাপ করে। তাই লেয়ার তৈরি করে আঁকতে হবে একদম পেছনের বস্তু থেকে। এই পেইন্টিং-এ আমি প্রথমে ‘Background Layer’ লেয়ার গ্রুপ তৈরি করেছি এর ভেতর ঝোপঝাড় মাটি তার উপরে উপরের ডিটেইল লেয়ার এরপর ‘Stair’ লেয়ার গ্রুপ এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য লেয়ার/লেয়ার-গ্রুপ।
6
ছবি ৬

রঙের ব্যবহার ও আলোর ব্যবহার
রঙ করার ক্ষেত্রে আমি প্রথমে মিডটোনের রঙ দিয়ে আঁকা শুরু করি এরপর ডার্ক টোন আর লাইট টোন যোগ করি এরপর আরেকটি লেয়ারে ডিটেইল টেক্সচার আঁকি। এই পেইন্টিংটির জন্য আমি ডিফল্ট ব্রাশ ‘Oil Medium Wet Flow (32)’ নম্বর ব্রাশ দিয়ে আঁকা শুরু করি, ‘Opacity ৩০ ও ৬০’। একটি রঙ অথবা এক টোন আরেকটি টোনে মেলাতে আমি দুটি টোন এঁকে অপরের উপর আঁকি তারপর ‘Eye Dropper Tool’ (I) অথবা ব্রাশ ব্যবহারের সময় Alt চেপে দুইটি টোনের মাঝে সন্ধিস্থল থেকে রঙ নিয়ে মাঝে রঙ করে করে মিলাই। তিনটি ধাপে রঙ ও ডিটেইল করলেও এক্সপেরিমেন্ট করতে মাঝে মাঝে ৪-৫টা লেয়ারও নিয়ে থাকি(ছবি ৭)।
7
ছবি ৭

আগেই বলেছি প্রথমে একটি মিড টোন দিয়ে শুরু করে ডার্ক টোন তারপর লাইট টোন শেষে করে ডিটেইল সাথে খেয়াল রাখতে হবে কোনো বস্তুর উপর আলো পড়লে তার আলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা একেকরকম হয়ে থাকে। যেমন- কাঠের একরকম, কাপড়ের একরকম, কাচের একরকম, চামড়ার একরকম। এই প্রতিফলিত আলোকে বলা হয় ‘Ambient Light’ । আমি একদম ডার্ক টোন ব্যবহারে সরাসরি কালো রঙ ব্যবহার করিনি। যেই রঙ দিয়ে আঁকছি তারই ডার্ক টোন ব্যবহার করছি। আরো মনে রাখতে হবে আলো কোনো বস্তুর উপর পড়ে সেই বস্তুর রঙের আভা প্রতিফলিত হয়ে আশেপাশের বস্তুর রঙে প্রভাব ফেলে (ছবি ৮)।
8
ছবি ৮

আঁকাআঁকির টুল হিসেবে ‘Pen Tool’ এর ব্যবহার জানা অনেক জরুরি। নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে এর ব্যবহার সম্বন্ধে বিস্তারিত বলা আছে।
http://psd.tutsplus.com/tutorials/tools-tips/photoshops-pen-tool-the-comprehensive-guide/
http://www.vectordiary.com/illustrator/drawing-with-pen-tool/

‘Pen Tool’ ব্যবহারে কোনো বস্তুর অবয়ব সমান করে আঁকা ও সিলেক্ট করা সম্ভব। ধরি ‘Pen Tool’ দিয়ে একটি চারকোনা ঘর আঁকি। এটার ভেতরে রঙ দিতে শেইপটিকে সিলেক্ট করতে (Ctr+Enter) চাপিl সিলেক্ট হওয়া স্থানে রঙ দিয়ে পূর্ণ করতে (Alt+Backspace) চাপি। ব্রাশ দিয়ে সমান করে পাশাপাশি অথবা উপরে-নিচে দাগ টানার সময় আমি ‘Shift’ চেপে ধরি। একইভাবে ‘Pen Tool’-এর পয়েন্ট সমান করে আঁকার সময় ‘Shift’ চেপে ধরি (ছবি ৯)।
9
ছবি ৯

পেইন্টিং-এর বর্ণনা
আমার পেইন্টিংটি আঁকতে কী কী লেয়ার লাগবে তা আগে ঠিক করে লেয়ার/লেয়ার-গ্রুপ খুলে রেখেছি।আমি আগে সিঁড়ি দিয়ে আঁকা শুরু করতে চেয়েছিলাম তাই ‘Stair’ লেয়ার গ্রুপে চলে গেলাম। রেফারেন্স ছবির উইন্ডো আর মূল ক্যানভাস উইন্ডো পাশা পাশি রেখে রঙ মাখা শুরু করি (ছবি ১০)। এখন ধাপে ধাপে আঁকার স্ক্রিনশটগুলো দিয়ে যাচ্ছি।
10
ছবি ১০

উপরের আঁকার বর্ণনা অনুযায়ী আঁকা চলছে। ব্যাকগ্রাউন্ড লেয়ারে ‘Soft Round Brush’ ৩০০ পিক্সেল দিয়ে আঁকা।
11
ছবি ১১

12
ছবি ১২
13
ছবি ১৩

স্কিন টোন দিতে আমি সফট ব্রাশ ব্যবহার করেছি এবং রঙ মিশিয়েছি আগের বর্ণনা করা পদ্ধতিতে।
14
ছবি ১৪

চুল আঁকতে আমি ডিফল্ট ‘Spatter 59 Pixel’ ব্রাশটি ব্যবহার করেছি। F5 চেপে ব্রাশ সেটিংসে গিয়ে ‘Shape Dynamic’ অপশনটি চালু করতে হবে। ‘Other Dynamics’ চালু করতে হবে। ‘Smoothing’ অপশনটিও চালু করতে হবে। এবার ব্রাশ অপশনের ‘Brush Tip Shape’-এ গিয়ে ব্রাশ অ্যাঙ্গেল -১৪৫ ডিগ্রি দেই(এটা চুলের উপর নির্ভর করে)। ‘Spacing’ 0 পিক্সেল রাখি, খেয়াল রাখতে হবে যখনই নতুন কোনো ব্রাশ নেবো তার স্পেসিং যেন 0 পিক্সেল থাকে। (ছবি ১৬)
16
ছবি ১৫
17
ছবি ১৬
18
ছবি ১৭
19
ছবি ১৮
20
ছবি ১৯

আঁকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সব থেকে উপরে একটি নতুন লেয়ার খুলি (Ctrl+A) দিয়ে পুরো ক্যানভাস সিলেক্ট করি। পেইন্টিং থেকে আলোর একটি হালকা টোন নিয়ে (Alt+Backspace) দিয়ে ফিল করে দেই। লেয়ার প্যানেলে অপশনের ব্লেন্ডিং মোড ‘Normal’ থেকে ‘Multiply’ করে লেয়ার ‘Opacity’ কমিয়ে দেই।

ছবি আঁকার মাঝে মাঝে ‘খুউপ খিয়াল কইরা’ সেইভ করতে ভুলবেন না।
আমি হয়ত সব কিছু লিখে কুলাতে পারিনি। মনে প্রশ্ন আসলে অথবা বুঝতে অসুবিধা হলে জানাবেন। ধন্যবাদ।